রাজনীতি
ভোটের মাঠে নতুন কৌশল: হিন্দু ভোটব্যাংকে নজর দিচ্ছে জামায়াত
২৬ বাংলা টিভি 07-Nov-2025 225
সনাতন ধর্মাবলম্বী সমর্থকদের নিয়ে জামায়াতের সভা। ছবিঃ সংগৃহীত
ডেস্ক রিপোর্টঃ ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার উমেদপুর বাজারে বিকেলের দিকে কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বীকে নিয়ে বসে সভা করছিলেন স্থানীয় জামায়াত নেতারা। তাদের হাতে দলীয় লিফলেট, পাশে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পোস্টার। প্রশ্ন করতেই জানালেন, এটি সনাতন ধর্মাবলম্বী সমর্থকদের নিয়ে জামায়াতের সভা।
উমেদপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মো. শওকত আলী বলেন, “আমরা কয়েক মাস ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কাজ করছি। তারা এখন আমাদের রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দিচ্ছেন, দাঁড়িপাল্লার পক্ষে আছেন। কেন্দ্র থেকে নির্দেশ এসেছে ভিন্ন ধর্মের মানুষের কাছেও আমাদের রাজনৈতিক আহ্বান পৌঁছে দিতে।”
শুধু ঝিনাইদহ নয়, সম্প্রতি খুলনা, রাজশাহী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জামায়াতের এমন কর্মসূচির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি খুলনার ডুমুরিয়ায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে জামায়াতের “হিন্দু সম্মেলন”। এ ধরনের উদ্যোগ দেশে আগে কখনও দেখা যায়নি।
কেন জামায়াতের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন কিছু হিন্দু নাগরিক
শৈলকূপার সভায় উপস্থিত কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী জানান, ৫ আগস্টের পর তাদের এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। তখন জামায়াতের স্থানীয় নেতারা এসে তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেন।
তাদের ভাষায়, “জামায়াতের নেতারা এসে বলেছে, কোনো বিপদে পড়লে পাশে থাকবে, সাহায্য করবে। এই সহযোগিতার আশ্বাসেই আমরা তাদের সমর্থন দিচ্ছি।”
জামায়াত নেতা শওকত আলীও বলেন, “আমরা তাদের প্রতিবেশী হিসেবে দেখি, তারা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করবেন, এটা আমাদের দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দাঁড়িপাল্লা হচ্ছে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক, তারা আমাদের কাছ থেকে ইনসাফপূর্ণ আচরণ পাবেন।”
ভিন্ন ধর্মের সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অমুসলিমরাও সদস্য হতে পারেন। তাদের জন্য চারটি শর্ত-শৃঙ্খলা মানা, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা, দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং অবৈধ আয়ের পথে না যাওয়া।”
তবে তিনি স্বীকার করেন, “তারা মূল জামায়াতের নেতৃত্বে আসতে পারবেন না, কিন্তু তাদের নিজস্ব ফোরাম ও কমিউনিটিতে নেতৃত্ব দিতে পারবেন।”
এই বিষয়টি নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একটি ইসলামপন্থী দলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অন্তর্ভুক্তি আদৌ কতটা কার্যকর হবে, তা এখনই বলা কঠিন।
নির্বাচনী কৌশল নাকি সহাবস্থানের বার্তা
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার প্রায় ১০ শতাংশ। অনেক নির্বাচনী আসনে তাদের ভোটই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকায় আসন্ন নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোট কোন দিকে যাবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের এই উদ্যোগ মূলত সংখ্যালঘু ভোট আকর্ষণের কৌশল। খুলনায় অনুষ্ঠিত “হিন্দু সম্মেলন” ছিল এরই অংশ, যেখানে জামায়াতের প্রার্থী ও প্রতীক প্রচারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেখা যায়।
তবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমরা তাদের ভোটব্যাংক হিসেবে দেখি না, নাগরিক হিসেবে দেখি। ভোটার হিসেবে তারা দেশের অংশ। আমরা শুধু তাদের পাশে থাকতে চাই।”
হিন্দু সমাজে সংশয় রয়ে গেছে
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, “জামায়াতের গঠনতন্ত্র ও চিন্তাধারায় অন্য ধর্মের লোকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। এটা মূলত ভোটের রাজনীতি, ভোট সংখ্যা বাড়ানোর কৌশল।”
তিনি আরও বলেন, “যদি দলে অন্তর্ভুক্ত করেও তাদের কোনো বাস্তব দায়িত্ব না দেওয়া হয়, সেটা ক্ষণস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, সমমর্যাদা ও সমান অধিকারের নিশ্চয়তা না দিলে কাগজে কলমে সদস্য বানিয়ে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।”
news@26banglatv.com